সুনামগঞ্জের হাওরে পুরোদমে চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ। ধান কাটা আর কেনাবেচা নিয়েও আলোচনা মুখে মুখে। তবে উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষকরা। তারা ধারণা করছেন, সরকার প্রতিমণ ধানের মূল্য ১ হাজার ৪৪০ টাকা নির্ধারণ করলেও, হয়তো সেটি পাবেন না।
রাজনীতিবিদ ও কৃষক সংগঠকদের পরামর্শ সরকার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে এবং বেশি সংখ্যক কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনতে পারলেই কেবল ধানের নির্ধারিত মূল্য পাবেন কৃষকরা। অর্থাৎ মিলার ও ফড়িয়ারা তখন বাধ্য হবে উপযুক্ত মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে।
বাজারে ধানের মূল্য কি পরিমাণ বাড়বে বা কমবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে রবিবার(২০ এপ্রিল) জেলা ধান ক্রয় কমিটির নেওয়া সিদ্ধান্তের উপরই।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে এখন জোরেশোরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত হাওর ও হাওরেরে বাইরের খেত মিলিয়ে ২৪ শতাংশ ধান কাটা ও মাড়াই করা হয়েছে। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পাশাপশি খরচের জন্য ধান বিক্রয়ও করছেন কৃষকরা। এক্ষেত্রে বিপদগ্রস্ত কৃষকরা মিলার ও ফড়িয়াদের কাছে কম দামে অগ্রিম বিক্রয় করছেন ধান। আবার কেউ কেউ অপেক্ষা করছেন, সরকার ধান কেনা শুরু করলে ধানের দাম কিছুটা বাড়তে পারে, তখনই ধান বিক্রি করবেন তারা।
বিশ্বম্ভরপুরের করচার হাওরপাড়ের মুক্তিখলার এক কৃষক জানান, ধান কাটানোসহ অন্যান্য খরচ চালানোর জন্য ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম এনেছি। তাদের কথা দিয়েছি শুকনো ধান দেব প্রতিমণ ১০০০ টাকা দরে।
আরও পড়ুন: কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সেভাবেই ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
একই এলাকার আরেক কৃষক মহিবুর রহমান বলেন, সাত কেয়ার (তিন কেয়ারে এক এক একর)জমিতে ধানচাষ করেছেন তিনি। এরমধ্যে চার কেয়ার বর্গা (আধা আধি দেবার চুক্তিতে) করেছেন। চার কেয়ার শ্রমিক দিয়ে কেটেছেন, সাত ভাগে একভাগ দেবার চুক্তিতে। ধান পেয়েছেন প্রতি কেয়ারে ২২ মণ। সব মিলিয়ে ১৫০ মণের মতো ধান পাবেন তিনি। ১৫ থেকে ২০ মণ ধান বিক্রয় করবেন। সরকার ধান কেনা শুরু করলে গোডাউনে এক টন দেবার চেষ্টা করবেন। না হলে মহাজনের আড়তে নিয়ে যাবেন ১৫ থেকে ২০ মণ ধান।
জামালগঞ্জের বেহেলী ইউনিয়নের রহিমাপুরের কৃষক মুকুল রায় বলেন, ব্যাপারী (ধান কাটার শ্রমিক) মিলাইতে পারিনি। কাল-পরশু কাটানোর চেষ্টা করবো। ভরতপুর থেকে শ্রমিক আনার চেষ্টা করছি। তারা বলেছে কেয়ারে ৩০০ টাকা নগদ এবং সাত ভাগের এক ভাগ দিতে। হাওরে হারভেস্টার মেশিন (ধান কাটার যন্ত্র) নামে না। এজন্য বিপদে পড়েছি। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পর শুকিয়ে, আমরা দুই তিন ভাই মিলে দুই তিন টন ধান বিক্রি করবো। সরকারি গুদামে দিতে পারলে ভালো হত। এর আগে কোনো সময়ই দিতে পারিনি।
তাহিরপুরের বড়দলের সামায়ুন আহমদ বলেন, বিগত সময়ে ৫০ থেকে ৬০ জনের কৃষি কার্ড একজন নিয়ে গেছে। এই টাউটরাই ধান দিয়েছে। খাদ্য গোদামে ধান দিতে গেলেও তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে আমাদের বিদায় করেছে। এবার যদি সুযোগ পাই খাদ্য গোদামে ধান দেবার চেষ্টা করবো।
সামায়ুন জানান, বারো কেয়ার (এক হাল) জমি করেছেন। ছয় কেয়ার জমির ধান কেটেছেন, বাকী আছে ছয় কেয়ার। সব মিলিয়ে ২৫০ মণ ধান পাবেন।